বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জে বৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে মসজিদের ইমামের গলায় জুতার মালা পড়ানোর ঘটনার মুল হোতা ইউপি চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতিসহ তিন জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
এছাড়া এই ঘটনায় মেহেন্দিগঞ্জ থানায় ৭০ হাজার টাকা চাঁদাবাজি, শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন এবং আইসিটি আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নির্যাতনের শিকার ইমাম মাওলানা শহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে দায়ের করা ওই মামলায় ১০ জনকে নামধারী এবং আরো ৪-৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।
বরিশাল জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) নাঈমুল হক এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, মামলার প্রধান আসামি মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দড়িচর খাজুরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী ঘটনার পর থেকেই আত্মগোপনে চলে যায়।
এ কারণে তাকে গ্রেফতার করতে গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করেন তারা। পরে জানতে পারেন মোস্তফা রাঢ়ী মুলাদী পৌর এলাকায় আত্মগোপন করেছেন এবং রাতে লঞ্চ যোগে পালিয়ে ঢাকায় যাবেন।
এমন সংবাদের ভিত্তিতে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাঈমুল হক নিজেই মুলাদী পৌর এলাকার হাওলাদার বাড়ির সামনে অবস্থান নেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে ওই চেয়ারম্যান পালিয়ে যাবার সময় রাস্তা থেকে তাকে গ্রেফতার করেন।
তবে এর আগেই ঘটনার পর পরই বৃহস্পতিবার রাতে ইমামের গলায় জুতার মালা পড়ানোর ঘটনার মুল হোতা দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাবেক ইউপি সদস্য ছত্তার সিকদার এবং বৃহস্পতিবার সকালে বজলু আকন নামের অপর এক আসামিকে গ্রেফতার করা হয়।
এ নিয়ে মোট ৩ জন গ্রেফতার হয়েছে বলে জানান তিনি। এর পাশাপাশি আত্মগোপনে থাকা অপর নামধারী এবং অজ্ঞাতনামা আসামিদের গ্রেফতারে জেলা পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন জেলা পুলিশের এই কর্মকর্তা।
এদিকে মামলার বাদী মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার দরিচর খাজুরিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা সিকদারবাড়ি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা শহিদুল ইসলাম জানান, তিনি মধ্য দরিচর খাজুরিয়া দাখিল মাদ্রাসার অফিস সহকারি পদে চাকুরি করেন। করোনাভাইরাসের কারণে মাদ্রাসা বন্ধ ছিলো।
খোলা তারিখে উপবৃত্তির ফরম পূরণ করা হয়েছে। ওই দিন সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী কারিমা মাদ্রাসায় না আসায় মাদ্রাসা সুপারের নির্দেশে ফরমে বৃত্তির টাকা লেনদেনের জন্য মাওলানা শহিদুল ইসলামের বিকাশ নম্বর লিখে দেন এবং ওই নম্বরেই এক বছরের বৃত্তির এক হাজার ৮০০ টাকা আসে।
বিষয়টি জানতে পেরে গত ৩০ মে কারিমার বাবা কবির হোসেন ও খালু ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি এবং সাবেক ইউপি সদস্য সত্তার সিকদার মাদ্রাসায় এসে মাওলানা শহিদুল ইসলামকে মারধর করে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে ও বিকাশ সম্বরের সিমসহ মোবাইল সেট ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এতে বাধা দিতে গেলে তার বড় ছেলে আহসানুল্লাহকেও মারধর করা হয়।
তিনি আরো অভিযোগ করেন, অন্যায়ভাবে তারা আমাকে মারধর করে ঘটনার পর দিন অর্থাৎ ৩১ মে ইউনিয়ন পরিষদে আমার বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে অভিযোগ দেন। এই ঘটনায় সালিসের জন্য তারিখ ধার্য করা হয় ৩রা জুন সকাল ১০টায়। সে অনুযায়ী ৩রা জুন বুধবার সকাল ১০টায় দড়িচর খাজুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে যান আলাউদ্দিন। সেখানে বৃত্তির টাকা আত্মসাৎ না করলেও চেয়ারম্যান এবং তার লোকেরা আমার কাছে ৭০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের নামে চাঁদা দাবি করে। পাশাপাশি সকলের কাছে ক্ষমা চাইতে বলে।
তিনি বলেন, অন্যায় না করে জরিমানা এবং ক্ষমা চাওয়ার বিষয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে চেয়ারম্যান মোস্তফা রাঢ়ী ও ছাত্রীর খালু ছত্তার সিকদার শাস্তি স্বরূপ আমাকে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ইউপি কার্যালয়ে আটকে রাখে। সর্বশেষ আমার গলায় জুতার মালা পরিয়ে তার ভিডিও মোবাইলে ধারণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়।
এদিকে মেহেন্দিগঞ্জে ইমামের গলায় জুতার মালা পড়ানোর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলা পরিচালনার ঘোষণা দিয়েছেন বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট আফজালুল করিম। কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই তাকে সকল ধরনের আইনি সহায়তার ব্যবস্থা করে দিবেন বলে জানান তিনি।