৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় বরিশাল জেলা বাসদ কার্যালয়ে চলাচলের অযোগ্য ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট ও খাল-ড্রেন সংস্কারের দাবিতে, রিক্সা-হকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে বাসদের সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাসদ বরিশাল জেলার আহবায়ক ইমরান হাবিব রুমন ও সদস্য সচিব ডা: মনীষা চক্রবর্তী। আরও উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল রিক্সা-ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন (২৩২৪) এর সভাপতি দুলাল মল্লিক, সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম, জাহাঙ্গির হোসেন দিদার, ভ্যান শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি মো. রফিক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের মহানগর সাংগঠনিক সম্পাদক সুজন আহমেদ, প্রচার সম্পাদক বিজন শিকদার, কৌশিক বেপারি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন,বর্তমানে বরিশালের রাস্তার ৯০ শতাংশ রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী। খানা-খন্দে পরিপূর্ণ রাস্তা দিয়ে চলতে গিয়ে জনগনের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতায় রাস্তাগুলি পরিণত হচ্ছে নদীতে, পানিবন্দী হয়ে মানুষ অসহনীয় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। নগরীর ২২টি খালের অধিকাংশই মৃত এবং তা পুনরুদ্ধারে গত ২ বছরে বরিশাল কোন দৃশ্যমান উদ্যোগ নেয়া হয়নি। যারফলে সাম্প্রতিক সময়ে জোয়ারের পানি বেড়ে নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোডকেও প্লাবিত করেছে, যা বরিশালে অভূতপূর্ব ঘটনা। বরিশালবাসীকে যারা আগামীর বরিশালের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়ে ক্ষমতায় গিয়েছেন, সেই উন্নয়ন এর ধাক্কা বরিশালবাসী ভাঙাচোরা রাস্তায় চলতে গিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণের হার অত্যন্ত উচ্চ, কিন্তু নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা দেবার বেলায় তৎপরতা প্রায় অদৃশ্য।
বক্তারা আরো বলেন,সাম্প্রতিক সময়ে বিসিসি থেকে বরিশালে চলমান রিক্সার লাইসেন্স নবায়ন করার জন্য বারবার তাগাদা দেয়া হচ্ছে অন্যথায় রিক্সা উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হচ্ছে। কিন্তু বিগত বেশ কয়েক বছর ধরে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে লাইসেন্স নবায়নের কোন উদ্যোগ না থাকায় এই রিক্সা চালকদের কয়েক বছরের নবায়ন ফি বকেয়া পড়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের গাফলতির এই বকেয়ার দায়ভার কোনভাবেই রিক্সা শ্রমিকদের উপর চাপানো ঠিক নয়। রিক্সার লাইসেন্স নবায়ন করতে গিয়ে শ্রমিকদের কাছ থেকে বিগত কয়েক বছরের সকল বকেয়া আদায়ে চাপ দেয়া হচ্ছে যা এই করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে অনেক রিক্সাশ্রমিকের জন্যই দেয়া সম্ভব নয় এবং এটা বেশ অমানবিকও বটে। করোনা মহামারির একটা বড় সময় রিক্সা বন্ধ ছিল এবং এখনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কারণে রিক্সা শ্রমিকদের আয় কমে গেছে। এই অবস্থায় যেকোন জনপ্রতিনিধির উচিত এই রিক্সাশ্রমিকদের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু তা না করে বিসিসি থেকে যেভাবে এই মহামারি পরিস্থিতিতে টাকা আদায়ে রিক্সাশ্রমিকদের উপর চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে এবং নাহলে রিক্সা উচ্ছেদের হুমকি দেয়া হচ্ছে তা জনগনকে বিস্মিত করেছে। বক্তারা অবিলম্বে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে রিক্সা-ইজিবাইক-হকার উচ্ছেদের এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানান, একইসাথে করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বকেয়া ফি মওকুফ করে রিক্সাশ্রমিকদের লাইসেন্স নবায়নের দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলন থেকে ৩ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়-
১) অবিলম্বে বরিশালে চলাচলের অযোগ্য সকল ভাঙাচোরা রাস্তাঘাট-খাল-ড্রেন ও খাল সংস্কার কর।
২) রিক্সা-ইজিবাইক ও হকার উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র বন্ধ কর।
৩) করোনা মহামারি পরিস্থিতিতে বকেয়া ফি মওকুফ করে রিক্সাশ্রমিকদের লাইসেন্স নবায়নের সুযোগ দাও।
বক্তারা নিম্নোক্ত কর্মসূচি ঘোষণা করেন-
৯ সেপ্টেম্বর, বুধবার, সকাল ১১টা সাগরদী-রূপাতলী
১০ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টা ভাটিখানা
১১ সেপ্টেম্বর, শুক্রবার বিকাল ৪টা পলাশপুর
১২ সেপ্টেম্বর, শনিবার সকাল ১১টা কাউনিয়া বিসিক
১৩ সেপ্টেম্বর, রবিবার সকাল ১১টা কাশিপুর
১৫ সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার সকাল ১১টা কেন্দ্রীয় সমাবেশ ও মেয়র বরাবর স্মারকলিপি পেশ
সংবাদ সম্মেলন থেকে বক্তারা বরিশালের মানুষের নাগরিক অধিকার রক্ষার এই কর্মসূচিতে সকলের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করেন।