আসন্ন বরিশাল সিটি কপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নিলেও তা মানছেন না স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলের হুঁশিয়ারি ছিল এই নির্বাচনে যারা অংশ নেবে তাদেরকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।
দলের এমন সিদ্ধান্তে অনেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও কোনো কোনো প্রার্থী তাদের স্ত্রীকে দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছেন। আবার দলের এক শীর্ষ নেতা তার ঘনিষ্ঠজনকে দিয়ে নির্বাচন করাচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
জানা গেছে, আগামী ১২ জুনের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ২২ নং ওয়ার্ডে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ১ নং সদস্য আ ন ম সাইফুল আহসান আজিম নিজে প্রার্থী হন। পরে দলের কঠোর হুঁশিয়ারি ও নিজের পদ বাঁচাতে তার স্ত্রী জেসমিন সামাদ শিল্পী ওই ওয়ার্ড থেকে সাধারণ কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
এ ছাড়া নগরীর ১৮ নং ওয়ার্ডে বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব ও চারবারের কাউন্সিলর মীর জাহিদুল কবির জাহিদ নিজের অবস্থান ধরে রাখতে নিজে নির্বাচনে না গিয়ে স্থানীয় বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউল হক মাসুমকে দিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করাচ্ছেন।
এ নিয়ে বরিশাল বিএনপিতে চলছে নানা আলোচনা। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিন বলেন, আর যারা নির্বাচন করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বিএনপি।
জানা গেছে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে একজন এবং কাউন্সিলর পদে ২০ জন সাবেক ও বর্তমান বিএনপি নেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র পদে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক নেতা কামরুল আহসান রুপনও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে টেবিলঘড়ি প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন। থেমে নেই কাউন্সিলর প্রার্থীরাও।
কামরুল আহসান ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক নেতা। তার বাবা আহসান হাবিব ছিলেন নগর বিএনপির সভাপতি ও কেন্দ্রীয় কমিটির মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক।
গত বছর মারা যান তিনি। নগর বিএনপির সাবেক ও বর্তমান কমিটির ৬ জন নেতার সঙ্গে এসব নিয়ে কথা হলে তারা পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের বৃহৎ স্বার্থকে প্রাধান্য না দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ দেখায় দলে খারাপ নজির সৃষ্টি হলো।
বিশেষ করে মহানগর কমিটির দায়িত্বশীল বেশ কয়েকজন নেতার এমন আচরণে তারা হতাশ। এসব কারণে দলের সাংগঠনিক শক্তিতেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক মনিরুজ্জামান খান বলেন, যারা প্রার্থী হয়েছেন, তাদের তালিকা কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। যারা নির্বাচন করছের তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দল।
নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিএনপি নেতারা হলেন- মহানগরীর ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সৈয়দ হাবিবুর রহমান, ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান টিপু, ৮ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সদস্য মো. সেলিম হাওলাদার, ৯ নম্বর ওয়ার্ডে বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক হারুন অর রশিদ, মহানগর যুবদলের সহ-সভাপতি হুমায়ুন কবির, ১৫ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপি সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, ১৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য সচিব জিয়াউল হক মাসুম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাবের আবদুল্লাহ সাদী, জেলা তাঁতী দলের সাবেক সভাপতি কাজী মো. শাহিন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মানিক ইসলাম, ১৯ নম্বর মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম আমিন, ২২ নম্বর মহানগর মহিলা দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জেসমিন সামাদ শিল্পী, ২৪ নম্বর মহানগর বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফিরোজ আহমেদ, ২৬ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, ২৮ নম্বরে মহানগর বিএনপির সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক কাউন্সিলর মো. হুমায়ন কবির, ৪ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা ইউনুস মিয়া এবং ৩০ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির নেতা খায়রুল মামুন।
এ ছাড়া সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ২ নম্বর ওয়ার্ডে মহানগর বিএনপির সদস্য ও বর্তমান কাউন্সিলর জাহানারা বেগম, ৯ নম্বরে মহানগর বিএনপির সদস্য সেলিনা বেগম এবং ১০ নম্বরে রাশিদা পারভীন প্রার্থী হয়েছেন।
এ ছাড়া আরও ৪টি সংরক্ষিত ওয়ার্ডে বিএনপি সমর্থক ৪ প্রার্থী রয়েছেন। মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আমিনুল ইসলাম প্রার্থিতা প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেও শেষ পর্যন্ত দলের সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে তিনি মাঠে রয়ে গেছেন।