কানুদাশকাঠি গ্রামের বেপারির পোল এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ীরা ধাড়ালো অস্ত্র দিয়ে পুলিশের এসআই খোকন হাওলাদারকে কুপিয়ে হাত কেটে জখম করে দিয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ও র্যাব অভিযান চালিয়ে ৪ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে। শনিবার দুপুরে পুলিশ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে ও পুলিশের ওপর হামলার ধারায় পৃথক দুটি মালমা দায়ের করেছে। শনিবার সন্ধ্যায় কানুদাশকাঠি গ্রামের বেপারির পোল এলাকার এ হামলার ঘটনায় গভীররাতে উন্নত চিকিৎসার জন্য এসআই খোকনকে ঢাকায় প্রেরণ করা হয়। গভীর রাতেই কানুদাশকাঠি এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি ক্লিনিকের কক্ষ থেকে ওই এলাকার রতন হাওলাদারের ছেলে সাগর হাওলাদার (২৮) ও শাহাদৎ হাওলাদারের ছেলে নাঈম হাওলাদারকে (২০) আটক করে পুলিশ এবং কানুদাসকাঠি গ্রামে র্যাব অভিযান চালিয়ে শাহ আলম জোমাদ্দারের ছেলে অনিক জোমাদ্দর (২৪), জোবায়ের আহম্মেদের ছেলে মোঃ আব্দুল্লাহ আল জাহেদ (২০) কে আটক করে। পরে ওই মামলায় তাদের গ্রেফতার দেখানো হয় এবং গ্রেফতারকৃতরা ওই এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী বলে আইনশৃঙ্খলাবাহিনী দাবি করেন। র্যাবের পক্ষ থেকে শনিবার বিকেলে প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়। সরেজমিনে গেলে প্রত্যক্ষদর্শী ২ ব্যক্তি জানান, সাদা পোষাকে ৪ জন পুলিশ মাদক ব্যবসায়ীদের আটকের জন্য অভিযান চালায়। অটোতে থাকা এক যুবককে পুলিশ ধরতে গেলে ওই যুবক ছুটে কোলায় নেমে পানির মধ্যে দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে একটি বাড়ির কোনায় ডোবায় গাপটি মেরে থাকে। ওই যুবক গ্যাঞ্জি ও জিন্স প্যান্ট পরিহিত ছিল। এসময় ৩ পুলিশ সদস্য ৩ দিক থেকে ঘিরে রাখে এবং এসআই খোকন একা মোটর সাইকেলে করে ওই বাড়ির পশ্চিম প্রান্তের দিকে চলে যায়। এর কতক্ষন পর হাত কাটা রক্ষ ঝড়া অবস্থায় কোলার মধ্য থেকে দিলিপ বাঁচাও দিলিপ বাঁচাও বলে চিৎকার করতে করতে উত্তর পাশের পীচঢালা রাস্তায় উঠে আসলে হাত থেকে রক্ষ ঝড়তে দেখে প্রত্যক্ষদর্শী একজন নারী ও এক বৃদ্ধ ব্যক্তি গামছা এনে হাতে পেচিয়ে দেয়। পরে স্থানীয় লোকজন ও অন্য পুলিশ সদস্যরা তাকে উদ্ধার করে এসআই খোকনকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শেরে-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাতেই তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়। অভিযানে অংশ নেয়া পুলিশ জানায়, শুক্রবার সন্ধ্যায় ৪ জন পুলিশ মিলে গ্রেফতারি পরোয়ানাভুক্ত মাদক কারবারি রাজিব মল্লিক ও তার সহযোগীদের আটক করতে কানুদাশকাঠি গ্রামের বেপারির পোল এলাকায় অভিযান চালানো হয়। সেখান থেকে একাধিক মাদক মামলার আসামি জেলে থাকা ইকবাল মল্লিকের ছোট ভাই মাদক ব্যবসায়ী রাজিব মল্লিকের সহযোগী সাগরকে আটক করে পুলিশ। পুলিশের হাতে আটক সাগরকে ছিনিয়ে নিতে রাজিব মল্লিক এসআই খোকনকে দাড়ালো দা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করা হয়। রাজাপুর স¦াস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও আবুল খায়ের রাসেল জানান, এসআই খোকনের ডান হাতের কেনুইতে দাড়ালো অস্ত্র দিয়ে আঘাতে হাতের রগসহ অনেক অংশ কেটে যায়। এতে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার নলবুনিয়া-কাটাখালি ও কানুদাশকাঠি গ্রামে একটি চক্র মাদকের স্বর্গরাজ্য বানিয়ে রেখেছে। আইনশৃঙ্খলাবাহিনী মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে মাদক সেবিদের গ্রেফতার করলেও তা কয়েকদিন পর আবার ছাড়া পেয়ে যায়। তবে মূল মাদক ব্যবসায়ী রাগববোয়াল ও হোতারা ধরা ছোয়ার বাহিরে থাকায় মাদকের ছোবল নিয়ন্ত্রনের বাহিরে চলে যায়। আইনশৃঙ্খলাবাহিনীকে মাদক নির্মূলে আরও কঠোর হওয়ার দাবি এলাকাবাসীর। রাজাপুর থানার ওসি জাহিদ হোসেন জানান, পুলিশ বাদি হয়ে পুলিশের ওপর হামলা ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলায় পাঁচজনের নাম উল্লেখসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে, অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। ঝালকাঠির সিনিয়র সহকারি পুলিশ সুপার (রাজাপুর সার্কেল) মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, এসআই খোকনকে কে কুপিয়েছে তা, তিনিই ভাল জানেন। কারন ওই ঘটনা উনি ছাড়া কেহই দেখেননি। আল্লাহ ওনাকে সুস্থ্য করে দিলে জানা যাবে। তবে জড়িতরা কেহই রেহাই পাবে না।