করোনা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমেই খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানম গ্যাব্রিয়েসুস।

জনস হপকিনস বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বে করোনার সংক্রমণ ৭০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু চার লাখেরও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রের করোনা পরিস্থিতি আরো শঙ্কাজনক। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ছাড়িয়েছে। মৃত্যু এক লাখের বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, সংক্রমণের গতি বাড়ছে লাতিন আমেরিকার দেশগুলোতে। ভয়ানক অবস্থা ব্রাজিল ও মেক্সিকোতে। গোট দক্ষিণ আমেরিকায় করোনায় সংক্রমিত ১২ লাখেরও বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৬০ হাজারের বেশি মানুষের।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান টেড্রস আধানমের বক্তব্য, চীন থেকে ডিসেম্বরে যে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার খবর মিলেছিল, ধীরে ধীরে তার কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপের দেশগুলো। ইতালিতে মৃত্যুমিছিল শুরু হয়ে যায়। তবে ইতালি এখন সংক্রমণের রাশ টেনেছে অনেকটাই। সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা দুই লাখ ৩৫ হাজারের কাছাকাছি। সে তুলনায় সংক্রমণের হিসাবে ইতালিকে টপকে গেছে ব্রাজিল, রাশিয়া, স্পেন, যুক্তরাজ্য ও ভারত। সংবাদ সংস্থা এএফপি ও সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়াল এ খবর জানিয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, গত ১০ দিনের মধ্যে ৯ দিনই এক লাখের বেশি সংক্রমণের খবর মিলছে। গত রোববার রেকর্ড সংক্রমণ ধরা পড়ে। একদিনে আক্রান্ত হয় এক লাখ ৩৬ হাজার মানুষ, যা এযাবৎকালের মধ্যে সর্বাধিক। এরই মধ্যে নিউজিল্যান্ড করোনামুক্ত হলেও ব্রাজিলের করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। দেশটিতে আক্রান্ত সাত লাখের বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৩৭ হাজার। একটি সমীক্ষা প্রতিবেদনে অনুমান করা হয়েছে, চলতি জুনের শেষ নাগাদ সংক্রমণের সংখ্যা ১০ লাখ ছাড়াবে। মৃত্যু হবে মোট ৫০ হাজারের বেশি মানুষের। ব্রাজিলের সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত শহর সাও পাওলোর আকাশ থেকে তোলা ছবিতে দেখা গেছে, কবরস্থানগুলোতে সারি করে মাটি খুঁড়ে জায়গা তৈরি করা হচ্ছে গণকবর দেওয়ার জন্য। সংক্রমণের হার বৃদ্ধির জন্য প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর ওপরেই দোষ চাপিয়েছেন অনেকে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আগামী দিনে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকায় করোনার সংক্রমণ ও এর কারণে মৃত্যু আরো বাড়বে। কিছু দেশ অর্থনীতিকে চাঙা করতে লকডাউন শিথিল করার কথা ভাবছে। কিন্তু তাতে বিপদ আরো বাড়বে। টেড্রস আধানম জানিয়েছেন, গত রোববার বিশ্বে যত সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে, তার ৭৫ শতাংশই ছিল আমেরিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার অন্তত ১০টি দেশে। মেক্সিকোতে গত সপ্তাহে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ছিল। দেশটিতে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটেছে গত সাত দিনে। রাশিয়াতেও সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত গতিতে। এখন পর্যন্ত সেখানে চার লাখ ৭৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত। স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা তিন লাখ ছুঁই ছুঁই। যুক্তরাজ্যেও একই চিত্র। সেখানে সংক্রমিত দুই লাখ ৮৭ হাজারের কাছাকাছি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে, এখন পর্যন্ত ১১০টি দেশে ৫০ লাখের বেশি ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম বা পিপিই পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। আরো প্রায় ১৩ কোটি পিপিই পৌঁছে দেওয়া হবে মোট ১২৬টি দেশে।