দেশে তামাক সস্তা ও সহজলভ্য হওয়ায় ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পরিবর্তে ভোক্তা কমদামি সিগারেট বেছে নিচ্ছে। করের ভিত্তি এবং হার খুবই কম হওয়ায় বিড়ি এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য জর্দা ও গুলও সহজলভ্য থেকে যাচ্ছে।
২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে তামাকজাত পণ্যের স্বাস্থ্য ঝুঁকি থাকায় এর ব্যবহার কমানো এবং রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রতি ১০ শলাকা সিগারেটের সর্বনিম্ন মূল্য ৪৭ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে, বাজেট প্রণয়নে যুক্ত অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- সিগারেটের মূল্যস্তর এবারও কমানো হচ্ছে না। ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে আরোপ করা হচ্ছে না এগুলোর ওপর বাড়তি করও। ফলে দেশের দামি সিগারেটগুলোর দাম খুচরা বাজারে প্রতি বছর ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা করে যে বাড়ে, এবারও তাই বাড়বে।
এক্ষেত্রে প্রতিবারের মতো এবারও খুচরা বাজারে এক শলাকা গোল্ডলিফ দাম ২টাকা বেড়ে ১২ টাকা হতে পারে এবং বেনসন এক শলাকার দাম বেড়ে দাঁড়াতে পারে ১৬ টাকা।
অন্যদিকে- সিগারেটের মূল্যস্তর বর্তমানে ৪টি থেকে কমিয়ে নিম্ন এবং প্রিমিয়াম-এ দুটিতে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছে তামাকবিরোধী জোট অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা), তামাকবিরোধী সংগঠন প্রগতির জন্য জ্ঞানসহ (প্রজ্ঞা) ৫টি সংগঠন। এসব তামাকপণ্যে ১ শতাংশ স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারসার্জ, খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখারও পক্ষে তারা।
প্রস্তাবনায় বলা হয়- সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে দুটিতে অর্থাৎ নিম্নস্তর এবং প্রিমিয়াম স্তরে নামিয়ে আনতে হবে। নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা এই দুই মূল্যস্তরকে একত্রিত করে প্রিমিয়াম স্তরে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ দশমিক ৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩২ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৫ দশমিক ৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
অন্যদিকে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য যেমন জর্দা ও গুলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪০ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৩ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের করতে বলা হয়েছে এবং সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। সে হিসেবে এক শলাকা গোল্ডলিফের খুচরা মূল্য দাঁড়াবে ১৬ টাকার মতো আর বেনসন এক শলাকার দাম দাঁড়াবে ২০ টাকা।
বর্তমান দেশে মোট তামাক ব্যবহারকারী মানুষের সংখ্যা তিন কোটি ৭৮ লাখের বেশি, যা মোট জনগোষ্ঠীর (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) ৩৫.৩ শতাংশ। এর মধ্যে প্রায় ৪৮ শতাংশ অতিদরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার করে, যা খুবই উদ্বেগজনক। এছাড়া, চার কোটির বেশি মানুষেও ওপর ধূমপায়ীদের প্রভাব পড়ে।