ইমরান হাবিব রুমন এর ওযাল থেকে
ঘটনাটি সবার জানা দরকার। জানা দরকার প্রশাসন আর রাষ্ট্রের চরম দায়িত্বহীনতা বোঝার জন্য। কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। বাসদের দুই কমরেড একজন বয়স্ক করোনা রোগীকে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়ার জন্য রওনা হলো। চলুন পিছনের ঘনটাগুলো শুনি।
একজন শ্রমিক(নাম প্রকাশ করলাম না), বয়স ৬৭/৬৮ হবে। জ্বর, কাশি ছিল। করোনা টেস্ট করার পর আজ রিপোর্ট নিতে যাওয়ার কথা হাসপাতালে। পুলিশ কাজটা সহজ করে দিল, সকাল বেলা গিয়ে বাসা লকডাউন করে দিয়ে আসল আর জানিয়ে আসলো করোনা পজেটিভ। বলে আসলো, পরিবারের কেউ যেন বাসা থেকে বের না হয়।পুলিশ তো লকডাউন করে চলে গেল।
শ্রমিক পরিবারটি দুপুরে কি খাবে, করোনা হয়েছে তো চিকিৎসা কিভাবে করাবে, ঔষধ কি খাবে, ঔষধ কই পাবে.. এমন অনেক প্রশ্ন করলো টেলিফোন করে।বিষয়টি বোঝার জন্য উনাকে বললাম, যে পুলিশ বাসা লকডাউন করে গেছে তাকে ফোন করে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার জন্য…! উনি পুলিশের সাথে যোগাযোগ করলেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা কোন দায়িত্ব নেবে না বলে জানিয়ে দিল। আমাদের মেডিকেল টিম টেলিফোনে চিকিৎসা দিল।
ঔষধের ব্যবস্থা করলো।বয়স্ক মানুষটির বিকাল থেকে কাশি বেড়ে গেলো, এ অবস্থায় বাসায় রাখাটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ তাই হাসপাতালে নিতে হবে। আমাদের টিমকে এম্বুলেন্স রেডি করতে আর ভলান্টিয়ারদের পিপিই পড়তে বললাম। আর ঐ রোগীকে বললাম, লকডাউন করে দিয়ে যাওয়া পুলিশকে ফোন করে বলতে যে, ডাক্তার আমাকে হাসপাতালে যেতে বলেছেন, আপনারা হাসপাতালে নেয়ার ব্যবস্থা করতে পারবেন কিনা..! যথারীতি উত্তর ‘না’।এম্বুলেন্স পাঠিয়ে দিয়ে ডা. মনীষা চক্রবর্ত্তীকে বললাম পুলিশ কমিশনার আর ডিসিকে ফোন করে জানতে। এই রকম অবস্থায় প্রশাসনের ভূমিকা কি?পুলিশ কমিশনারকে ফোনে পাওয়া গেল না।
জেলা প্রশাসককে ফোন পাওয়া গেল। তাঁকে বলা হলো, লকডাউনের বাসাগুলোতে খাবার, ঔষধ পৌঁছানো বা রোগীকে হাসপাতালে নিতে হলে আপনারা কোন ব্যবস্থা করছেন কিনা..? তিনি অপারগতা প্রকাশ করলেন।আচ্ছা, লকডাউনের এই পরিবারগুলোর দায়িত্ব কে নেবে…? এলাকার লোকজন তো ঐ বাড়িকে অনেকটা একঘরে করে দিচ্ছে। প্রশাসনও তো লকডাউন করেই দায়িত্ব শেষ করছেন, খাবার-চিকিৎসা বা ঔষধের দায়িত্ব নিচ্ছেন না..!প্রশাসনকে আগেও বলেছি এখনও বলছি, আপনারা যদি দায়িত্ব না নেন, তাহলে আমাদেরকে বলুন। অন্তত সকল লকডাউনের বাসাগুলোর ঠিকানা দিন।হ্যাঁ, আমরা দায়িত্ব নিতে চাই।
বরিশালের প্রায় পাঁচশ পরিবারের সমস্ত দায়িত্বই নিতে চাই। আপনারা শুধু তথ্য দিয়ে বন্ধুর মতো আমাদের পাশে দাঁড়ান।আমরা অবশ্যই পারবো। আমরা সততা আর নিষ্ঠার সাথেই কাজ করতে পারবো বলে আশা রাখি।কারণ সারাদেশের অসংখ্য মানুষের ভালবাসা আমাদের সাথে আছে, আর আছে নিষ্ঠাবান দক্ষ কমরেডরা..!!আসুন, একসাথে এই সংকট মোকাবেলা করি।
লেখক: বাসদ বরিশাল জেলার আহবায়ক প্রকৌশলী ইমরান হাবিব রুমন