মোঃ আঃ রহিম রেজা: ঝালকাঠি।
দেশের প্রখ্যাত জনপ্রিয় অভিনেতা ও নাট্য নির্মাতা ম ম মোর্শেদ ব্যতিক্রমী সাইকেল ভ্রমনের মাধ্যমে ঝালকাঠি, রাজাপুর ও বরগুনার বিভিন্ন এলাকার গুরুত্বপূর্ণ স্থান পরিদর্শন করেছেন। মূলত বিশেষ কিছু নাট্য নির্মানের পরিকল্পনা নিয়েই বেশ কিছু স্পর্ট ঘুরে দেখেছেন তিনি। ২৯ জুন সকালে সর্বশেষ তিনি ঝালকাঠির কীর্তিপাশা জমিদার বাড়ি, ভাসমান পেয়ারার হাট ও পেয়ারা বাগান, গাবখান মোহনা, গাবখান ব্রীজ, ধানসিঁড়ি নদী ও শেরে বাংলার একে ফজলুল হকের জন্মস্থান ’সাতুরিয়া-মিঞাবাড়ি’ পরিদর্শন করেন। এর আগে তিনি ২৬ জুন দুপুর ১২টা ৫৫ মিনিটে তার ফেসবুকে সাইকেল ভ্রমনের অভিজ্ঞতা নিয়ে স্টাটাস দেন। তা হুবহু তুলে ধরা হলো: (পুরনো পাগলের নতুন স্টাটাস)-২২’জুন ‘বরিশাল’ থেকে বাই-সাইকেলে ‘আমুয়া’র উদ্দেশ্যে রওয়ানা, ভাবনা ছিল ক্লান্ত লাগলে সাইকেল-সহ বাসে উঠব, কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৭০’কি.মি সওয়ারে সমর্থ হলাম। ২৩ তারিখ বুকাবুনিয়া-‘দয়ালের-বাড়ী’ ঘুরে ৩৫’কি.মি দূরে ‘কাকচিড়া’। ২৪ তারিখ ‘কালমেঘা’ হয়ে ২০’কি.মি, ‘পাথরঘাটা’। ৩ দিনে ১২৫’কি.মি সাইকেলে। (ফ্যাক্ট শুটিং লোকেশন খোঁজা)। এরপর তিনি ২৭ জুন বরিশালের বাসায় অবস্থান নেন। পরে ইনপিপেনডেন্ট টেলিভিশন ও সমকালের সাংবাদিক রহিম রেজা’র অহবানে ২৯ জুন দিনভর ঝালকাঠির বিভিন্ন গুরুত্বপর্ণ ও দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখে নাটক নির্মানের সম্মতি জ্ঞাপন করেন। পরিদর্শনে সফরসঙ্গী হিসেবে সাংবাদিক রহিম রেজা ছাড়াও রাজাপুর নৃত্য একাডেমীর শিল্পী মুনায়েম খান, আকাশ ও ইয়াসিন খানসহ জেলা বঙ্গবন্ধু প্রজন্মলীগের সাধারণ সম্পাদক তালাল আল আরাফাত ছিলেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সহকারি পরিচালক সমিতির সদস্য সাংবাদিক রহিম রেজা জানান, দেশের বিভিন্ন স্থানের নাটক বা ছবির স্যুটিং হলেও দ্বিতীয় কলকাতা খ্যাত ঝালকাঠিতে তেমন কোন স্যুটিং হচ্ছে না।
এজন্য দেশ বরন্য গুনি এ নাট্য নির্মাতা ও অভিনেতা ম ম মোর্শেদকে কাজ করার আহবান জানালে তিনি সম্মতি দেন। কাজ সম্পন্ন হলে ঝালকাঠির ইতিহাস ঐতিহ্য দেশ বিদেশে আরও সমাদৃত হবে। বাংলাদেশের নাটাঙ্গনে কিছু অভিনেতা আছেন যাঁরা নিজ দক্ষতায় হয়ে ওঠেন নাটকের মূল আকর্ষণ। তেমনি এক সফল অভিনয়শিল্পী হচ্ছে ম. ম. মোর্শেদ। ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয় দিয়ে নাটকে কাজ শুরু করলেও আজ তিনি নিজস্ব অভিনয় প্রতিভার গুণে হয়েছেন প্রধান শিল্পী। মেধা, মমন ও একাগ্রতা দিয়ে তিনি প্রতিটি চরিত্রকে প্রাণবন্ত করে তোলেন। দর্শকরা যেন বার বার তাঁর উপস্থিতি দেখতে চায় প্রতিটি দৃশ্যপটে। ম. ম. মোর্শেদ যখন যে চরিত্রেই অভিনয় করেন না কেন, তাকে বাস্তবধর্মী ও প্রাণবন্ত করতে তার জুড়ি নেই। তার সাথে মিশে যতটা বুঝা যায়, চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে তাঁর আগ্রহ বেশি। কখনও রিক্সাওয়ালা কখনওবা বিশ্ববিদ্যালয়েল শিক্ষার্থী। পাড়ার মাস্তান থেকে মসজিদের ইমাম।
মুদি দোকানদার থেকে সিনেমার পরিচালক, ছিঁচকে চোর থেকে সাহায্যাকারী বন্ধু যখন যে চরিত্রেই অভিনয় করেন সেটাকেই বাস্তবধর্মী করতে পারেন তিনি। চরিত্রের সঙ্গে মিশে যাওয়া, একে প্রাণবন্তভাবে উপস্থাপন, দর্শকদের মধ্যে বিনোদন সবকিছুই দেয়ার ক্ষমতা রাখেন এই গুণী অভিনয়শিল্পী। ম ম মোর্শেদ সবচেয়ে আলোচিত হয়েছেন ‘‘বিহাইন্ড দ্য সিন’’ নাটকে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে। তিনি মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও সফল হয়েছেন। কখন কিভাবে অভিনয়ের সঙ্গে যুক্ত হলেন- জানাতে চাইলে ম. ম. মোর্শেদ বলেন, ‘বরিশালে উদয়ন স্কুলে পড়ার সময় থেকেই অভিনয় জীবনের শুরু। স্কুল ছুটির পর প্রতিদিন বাসায় ফেরার পথে এক নাটকের দলের মহড়া দেখতে দেখতেই অভিনয়ের প্রতি অগ্রহ সৃষ্টি হয়। একদিন দুই বন্ধু মিলে যুক্তি করলাম যে, আমরাও নাটকে অভিনয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করব। কিন্তু সেদিন বন্ধু আর এলো না, পরে একাই গেলাম মহড়াকক্ষে। কথা বলতে চাইলাম কিন্তু আগ্রহ দেখালেন না। পরে খুব দৃঢ়তার সঙ্গে নিজের আগ্রহের কথা জানালাম। থিয়েটারের প্রধান ব্যক্তি জানালেন পরদিন আসতে। এভাবে কয়েক দিন ঘোরার পর সেই গ্রুপের সঙ্গে কাজ শুরু করি। আবৃতিও করেছি। ঢাকা এসেও মঞ্চে কাজ করেছি। এভাবে আস্তে আস্তে টিভি নাটকের সঙ্গে যুক্ত হই। ম. ম. মোর্শেদ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও সফল হয়েছেন। এছাড়া তিনি বেশ কয়েকটি বাংলা সিনেমা এবং কয়েক শ’ নাটকে অভিনয় ও পরিচালনা করেছেন। অভিনয় নিয়েই আছেন এবং থাকবেন ম. ম. মোর্শেদ। তিনি এটাকে শুধু পেশা হিসেবেই নেননি। তার ধ্যান, জ্ঞান ও সাধনা এই অভিনয়।( আবৃত্তিকার হিসেবেও দেশ-বিদেশে তাঁর পরিচিতি রয়েছে) দক্ষিনাঞ্চল ভ্রমন সম্পর্কে ম. ম. মোর্শেদ বলেন, ঝালকাঠির কাঠালিয়ার আমুয়াতে তার দাদা বাড়ি এ কারনে ঝালকাঠি ও বরগুনা জেলাসহ দক্ষিনাঞ্চলের স্থানীয় শিল্পী ও ঢাকার অভিনয় শিল্পীদের নিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ও দর্শনীয় স্থানে কাজ করে আগ্রহ রয়েছে। করোনা পরিস্থিতি বুঝে খুব শীগ্রই কয়েকটি নাটক নির্মানের কাজ শুরু করার পরিকল্পনা করেছে। পরিবারের সকলকে নিয়ে দেখার মত এবং করোনা পরিস্থিতিতে বিনোদনের লক্ষে মান সম্মত বেশ কিছু কাজ সম্পন্ন করতে তিনি সকলের সহযোগীতা কামনা করেছেন।