২৮ দিনে ৪ নেতা হারাল আ.লীগ

মাত্র ২৮ দিনের ব্যবধানে প্রথম সারির ৪ নেতা হারাল আওয়ামী লীগ। গত ১৩ জুন বেলা ১১টার দিকে মৃত্যুবরণ করেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের মুখপাত্র ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। রাজধানীর শ্যামলীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার করোনা পজিটিভ ধরা পড়ে। করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর হঠাৎ করে মস্তিকে রক্ষক্ষরণ হলে তাক্ষণিকভাবে তার সার্জারি করা হয়। ৮ দিন মৃতুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

একই দিনে মৃত্যুবরণ করেন আওয়ামী লীগের আরেক কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য, দলের সাবেক ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শেখ মো. আবদুল্লাহ। ১৩ জুন রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু হয়। তার বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। তিনিও করোনা পজেটিভ ছিলেন।

আওয়ামী লীগের অপর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরান গত ১৫ জুন মৃত্যুবরণ করেন। গত ৫ জুন করোনা আক্রান্ত হয়ে বাসায় আইসোলেশনে ছিলেন কামরান। শারীরিক অবস্থার কিছুটা অবনতি হলে ৬ জুন তাকে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন সেন্টারে ভর্তি করা হয়। অবস্থার আরও অবনতি হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৭ জুন সন্ধ্যায় তাকে শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল থেকে বিমানবাহিনীর এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকায় নেয়া হয়।

এরপর দিন ৮ জুন তাকে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় প্লাজমা থেরাপি দেয়া হয়। প্লাজমা থেরাপির পর কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠছিলেন তিনি। তবে তাকে সিএমএইচের আইসিইউতে রেখে অক্সিজেন সাপোর্টে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় এবং তিনি মারা যান।

সর্বশেষ গত বুধবার ব্যাংককে স্থানীয় সময় রাত ১২টা ২৬ মিনিটে মারা গেলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন। জ্বর, অ্যালার্জিসহ বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে অসুস্থ অবস্থায় গত ২ জুন ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি হন সাহারা খাতুন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে গত ১৯ জুন সকালে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। এরপর অবস্থার উন্নতি হলে তাকে গত ২২ জুন দুপুরে আইসিইউ থেকে এইচডিইউতে (হাই ডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) স্থানান্তর করা হয়। পরে ২৬ জুন সকালে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে আবারও তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়।

গত সোমবার (৬ জুলাই) এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুনকে। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত ১১টা ২৫ মিনিটে তিনি বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন।

একজন ত্যাগী নেতার মৃত্যুই যেখানে দলের জন্য অপূরনীয় ক্ষতি বয়ে আনে, সেখানে মাত্র ২৮ দিনে ৪ শীর্ষ নেতার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। করোনা সংকটের মধ্যে পরীক্ষিত ত্যাগী এই নেতাদের মৃত্যু দলকে আরেকটি সংকটের মধ্যে ফেলল বলে মনে করছেন রাজণৈতিক পর্যবেক্ষকরা।