করোনার টিকার বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের আওতায় ফাইজারের আরও ৩০ লাখ ডোজ করোনার টিকা পেয়েছে সরকার। এই সপ্তাহেই এসব টিকা নির্দিষ্ট সংখ্যক মানুষকে বুস্টার ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। দেশে টিকার মজুদ না থাকায় তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ দেওয়া গত মার্চ মাসে স্থগিত করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
এদিকে, দেশে ২০২০ সালের ৮ মার্চ করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হয়। সংক্রমণ প্রতিরোধে পরের বছরের ফেব্রুয়ারিতে সারাদেশে করোনা টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া শুরু হয়।
বিভিন্ন উৎস থেকে দেশে এ পর্যন্ত করোনার টিকা এসেছে ৩৬ কোটি ৪৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭৯০ ডোজ। এইসব টিকার মধ্যে রয়েছে অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, জনসন, চীনের সিনোফার্মা এবং সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন দেওয়া হয়। আর দেশে প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে ৮৮ শতাংশ, দ্বিতীয় ডোজ ৮২ শতাংশ এবং তৃতীয় ডোজ ৪০ শতাংশ দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখার তথ্য অনুযায়ী, ভ্যাকসিনের জন্য সুরক্ষায় নিবন্ধন করেছে ১১ কোটি ৪৫ লাখ ১০ হাজার ৯ জন। তাদের মধ্যে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে ৯ কোটি ২৩ লাখ ৭৫ হাজার ৬৯৭ জন, পাসপোর্টের মাধ্যমে ১৭ লাখ ১৫ হাজার ৮২৯ জন এবং জন্মসনদের মাধ্যমে ২ কোটি ৪১ লাখ ৮ হাজার ৪৮৩ জন।
সোমবার সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, কোভ্যাক্সের মাধ্যমে পাওয়া ৩০ লাখ ডোজ ভিসিভি (ভ্যারিয়েন্ট কন্টেইনিং ভ্যাকসিন) তৃতীয় ও চতুর্থ ডোজ হিসেবে দেওয়া হবে। দেশের সিটি করপোরেশন, জেলা/উপজেলা ও পৌরসভা পর্যায়ে স্থায়ী কোভিড-১৯ টিকাদান কেন্দ্রে এ সপ্তাহ থেকেই দেওয়া হবে এই ভ্যাকসিন।
তিনি বলেন, এই টিকাটি নতুন উদ্ভাবিত টিকা এবং বিভিন্ন দেশে দেওয়া হচ্ছে। বুস্টার ডোজ হিসাবে আমরা এই টিকাটি দেব।
নতুন করে শুরু হওয়া বুস্টার ডোজের ক্ষেত্রে কারা অগ্রাধিকার পাবে, এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, যাদের বয়স ১৮ বছরের বেশি তারা তৃতীয় ডোজ তারা পাবে। আর ক্রনিক রোগী যারা তারা, যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নেই, গর্ভবতী মায়েদের এবং সম্মুখ সারির যোদ্ধা যারা চতুর্থ ডোজ পায়নি, তাদেরকে টিকা দেওয়া হবে।
ডব্লিউএইচও এই টিকার অনুমোদন দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমাদের দেশে আমাদের টিকাদানের জাতীয় কারিগরি কমিটি, তারও অনুমোদন ও মতামত রয়েছে। আমাদের ওষুধ প্রশাসনেরও অনুমোদন রয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা ইতিমধ্যে ট্রায়ালের কাজও শেষ করেছি, যেখানে কোনো সমস্যা দেখা দেয়নি। আমরা সারা দেশে সিটি করপোরেশন, জেলা-উপজেলায় যে টিকাকেন্দ্রগুলো আছে, সেখানে আমরা এই টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করছি।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রথম ডোজের টিকা নিয়েছেন ১৫ কোটি ৭৪ লাখ ৮হাজার ৬২০ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ টিকা নিয়েছে ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫১২ জন। তবে বুস্টার ডোজ নেওয়ার সময় তেমন সাড়া ছিল না। প্রথম বুস্টার ডোজ নিয়েছে ৬ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৮৯৮ জন। বারবার তাগিদ দিলেও দ্বিতীয় বুস্টার ডোজে অনীহা দেখা যায়। আর এখন পর্যন্ত ৩১ লাখ ৫৮ হাজার ৩ জন দ্বিতীয় বুস্টার ডোজ নিয়েছে।
দেশে আর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সি প্রথম ডোজ পেয়েছেন ১ কোটি ৭৪ লাখ ১৪ হাজার ৩৩৬, দ্বিতীয় ডোজ ১ কোটি ৬২ লাখ ৫৬ হাজার ৪৪১ জন। আর ৫ থেকে ১১ বছর বয়সি প্রথম ডোজ ১ কোটি ৯২ লাখ ১৯ হাজার ৭৭২জন এবং দ্বিতীয় ডোজ ১ কোটি ৩৮ লাখ ৮ হাজার ৯১৭ জন শিশু টিকা নিয়েছে।