আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু হওয়ার পর থেকে ব্যানার-পোস্টারে ছেয়ে গেছে গোটা বরিশাল নগর। প্রকাশ্যে সিটি নির্বাচনে (বিসিসি) অংশগ্রহণকারী প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। নিজেদের জন্য দোয়া চাওয়ার পাশাপাশি বিজয়ের লক্ষ্যে ভোটও চাইছেন।
তবে শুধু যে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন এমনটা নয়, প্রার্থী ও তাদের কর্মী-সমর্থকরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সরব রয়েছেন। এরইমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে বরিশাল সিটি নির্বাচনে প্রার্থীদের ব্যানার-পোস্টারের ছবি। যা অনেক ক্ষেত্রে প্রার্থী নিজে, আবার কর্মী-সমর্থকরাও শেয়ার কছেন। ক্যাপশনে তারা ভোট চাওয়ার পাশাপাশি নিজের জন্য জনগণের কাছে দোয়া চাচ্ছেন।
প্রার্থীরা বলছেন, হালের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়েই ডিজিটাল মাধ্যমগুলোয় তারা প্রচারণা চালাচ্ছেন। কিছু মানুষ আছে এখান থেকেও দেখে দোয়া করে, আবার অনেকের ভোটের কথাও মনে পড়ে যায়।
ভোটার ও প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, বিষয়টি বেশ সহজলভ্য প্রচারণা। ব্যানার, পোস্টার, মাইকিং করে প্রচারণা চালাতে যে কসরত করতে হয়, এখানে তার প্রয়োজন হয় না।
তবে এ মাধ্যমে প্রচারণাটা যে নিশ্চিত ভোট এনে দিচ্ছে সেটা এখনও বলার সময় আসেনি। এজন্য প্রার্থীকে স্ব-শরীরে ভোটারদের সাথে দেখা করতেই হবে।
এ বিষয়ে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক ও নির্বাচন বিশ্লেষক মো. সোহেল রানা বলেন, প্রচারণায় প্রযুক্তির ব্যবহার না বলে রাজনীতিতে প্রযুক্তির ব্যবহার—বিষয়টিকে এভাবে নিতে পারলে ভালো হয়।
ভোটের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিক প্রচারণার সময়কাল সীমিত, কিন্তু পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়ার কাজ পুরো মেয়াদ বা তারও অধিক সময় ধরে চলতে থাকে।
প্রার্থীরা প্রযুক্তির ব্যবহারের মূল উদ্দেশ্যটি বুঝতে পারলেই সেটি সার্বিক কল্যাণ বয়ে আনবে। জনগণের কাছে জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে প্রযুক্তি হলো সবচেয়ে আধুনিক ও সহজলভ্য মাধ্যম।
এক্ষেত্রে প্রার্থীর ভূমিকাই মূখ্য। কতটা আন্তরিকতায় তিনি তার উন্নয়ন পরিকল্পনা জনগণকে অবহিত করবেন সেটি একান্তই তার ওপর নির্ভর করে।
তবে মনে রাখতে হবে, শাসন প্রক্রিয়া যত অংশগ্রহণমূলক, ততই তা মঙ্গলজনক। সুশাসন প্রতিষ্ঠার যতগুলো শর্ত রয়েছে, প্রযুক্তির ব্যবহার তার প্রায় প্রত্যেকটি নিশ্চিতে সুনির্দিষ্ট ভূমিকা রাখতে পারে।
তিনি আরও বলেন, প্রচার-প্রচারণায়ও কিছু প্রার্থীকে দেখছি, প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। তবে, প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারলে সেটি আজকের বাস্তবতায় ভালো ফল বয়ে নিয়ে আসবে।
খুব কমক্ষেত্রেই দেখছি, প্রার্থীরা ভোটারদের সঙ্গে আই-টু-আই কন্টাক্টের সুবিধাটি নিতে পারছেন। একটি সু-পরিকল্পিত ইশতেহার এই নির্বাচনকে আরও স্পন্দিত করতে পারে যেখানে মানুষের প্রকৃত ও প্রাসঙ্গিক দাবি দাওয়া ও প্রার্থীর সম্ভাব্য করণীয় সম্পর্কে আলাপ থাকতে পারে। নির্বাচিত হওয়ার পর বিসিসির প্রত্যেকটি ওয়ার্ডভিত্তিক মাসিক ভার্চুয়াল টাউনহল মিটিং হতে পারে।
মেয়রও এ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। এক্ষেত্রে জনগণ তাদের প্রতিনিধিকে সরাসরি ও পাবলিকলি প্রশ্ন করার সুযোগ পেয়ে থাকেন।
সুধী সমাজের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে ভার্চুয়াল টাউনহল মিটিং করা যায় সে উদ্যোগ করার সময় এসেছে। মনে রাখতে হবে, উন্নত গণতন্ত্রের দেশে টাউনহল প্রথা কিন্তু বহু আগের।
প্রযুক্তির ব্যাবহারের সেটিকে আমরা ভার্চুয়ালি করতে পারি। এতে সময়, খরচ ও স্পেসও কম প্রয়োজন হয়। আমার বিশ্বাস, বিসিসির প্রার্থীরা প্রযুক্তির ব্যাবহার নিয়ে নতুন করে ভাববেন।