করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পর মে মাস থেকেই বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো অনলাইনে শিক্ষার্থীদের পড়ানো শুরু করেছে। তবে অনলাইনে পড়ানোর কারণে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তাদের অভিযোগ, করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণার পরপরই তারা গ্রামের বাড়িতে চলে যায়। যার ফলে এখন ক্লাস শুরু হওয়ায় ইন্টারনেটের সমস্যার জন্য অনেকেই ক্লাস করতে পারছে না এবং অনেকেই ক্লাস করলেও শিক্ষকদের লেকচার বুঝতে পারছে না। আবার বেশীরভাগ সময় ইন্টারনেট থাকছে না। কিন্তু এক্ষেত্রে শহরের শিক্ষার্থীদের কোন সমস্যা হচ্ছে না বলেও জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কখনো ফেসবুক লাইভ কিংবা জুম ব্যবহার করে শিক্ষকরা তাদের ক্লাস নিচ্ছেন। তাই ক্লাসে অংশ নিতে গ্রামের অনেক শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ জেলা শহরে মেস ভাড়া নিয়ে ক্লাস করছেন।
আবু বক্কর। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই তিনি নিজ বাড়িতে (সিরাজগঞ্জ কাজীপুর) আছেন। গত ৭ জুলাই থেকে তার বিভাগ অনলাইনে ক্লাসে শুরু করেছে। অনলাইনে ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকেই আবু বক্কর নিজ জেলা থেকেই ক্লাসে অংশ নিচ্ছেন।
ক্লাসের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু বক্কর বলেন, করোনার কারণে প্রায় সাড়ে তিনমাস ধরে আমরা বাড়িতে আছি। আর বাড়িতে কোন কাজ না থাকার কারণে আমরা হতাশায় ভুগছিলাম। তাই অনলাইন ক্লাস শুরু হওয়াটা আমাদের কাছে একটা ইতিবাচক দিক। কারণ আমরা কোর্সগুলো শেষ করে রাখতে পারছি। পরবর্তীতে পৃথিবী সুস্থ হওয়ার পরে যখন বিশ্ববিদ্যালয় খুলবে তখন আমরা পরীক্ষা দিয়ে সেমিস্টারগুলো করতে পারবো।
অনলাইনে ক্লাসে কোন সমস্যা হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনলাইনে পড়া না বুঝলে শিক্ষকদের প্রশ্ন করা যায়। আর শিক্ষকরা আমাদের বলেছেন যে, তোমরা ক্লাসের পরে বাড়িতে পড়ার সময় কোন কিছু না বুঝলে আমাদেরকে মেইল করবে, পরবর্তীতে আমরা তোমাদের সেটা বুঝিয়ে দেবো। তবে ইন্টারনেটে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলেও জানান আবু বক্কর।
আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ঋতুল দেবনাথ। তিনি ঢাকা থেকে অনলাইন ক্লাসে করছেন। অনলাইনের ক্লাসের বিষয়ে ঋতুল দেবনাথ বলেন, আমাদের ৬ মাসের সেমিস্টার। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেমিস্টার শেষ করতে হবে। এক্ষেত্রে অনলাইনে ক্লাস খুবই জরুরি। সুতরাং এটা চালিয়ে যেতে হবে। আর অনলাইনে ক্লাস করার সময় যেটা আমি বুঝছি না সেটা জিজ্ঞেস করার পর শিক্ষকরা আবার সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছেন। আর অসুবিধা হচ্ছে, প্রথমত আমাদের ইন্টারনেটে অনেক সমস্যা হয়। কারণ সবাই ঢাকা নেই। যারা ঢাকায় নাই তাদের জন্য ক্লাসে অংশ নিতে অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে।
এদিকে এখনো জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে ক্লাস শুরু হয়নি। তবে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে ক্লাস শুরু হবে বলে জানা গেছে। এবিষয়ে কথা বলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. লিখন মিয়া।
তিনি বলেন, করোনাভাইরাসে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণার পর থেকেই আমি আমার গ্রামের বাড়িতে (সিরাজগঞ্জ চিলগাছা) আছি। তবে আর কয়েক দিনের মধ্যে আমাদের অনলাইনে ক্লাস শুরু হবে। তাই ক্লাস করার জন্য আমি সিরাজগঞ্জ শহরে একটি মেস ভাড়া নিয়েছি। যাতে অনলাইনে ক্লাস করতে ইন্টারনেটের কোন সমস্যা না হয়।
অনলাইনের ক্লাসের বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, কাউকে বেশি সুবিধা দেয়া বা কাউকে বঞ্চিত রাখার উদ্দেশ্য আমাদের নেই। আর আমাদের এতোগুলো ছেলে-মেয়ে তাদের কী কী সাপোর্ট লাগবে? কারো হয়তো স্মার্টফোন লাগবে এবং কোথাও হয়তো আর্থিক সাহায্য লাগবে। কিন্তু আমাদের যতটুকু সামর্থ্য আছে, তা নিয়েই আমরা শুরু করি।
এবিষয়ে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এম এম শহিদুল হাসান বলেন, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ঋণ সাহায্য দরকার। প্রত্যেক ইউনিভার্সিটিতে একটা আইটি সেক্টর আছে। সেই আইটি সেক্টর একটা ধারণা দিতে পারবে, তাদের কী করতে হবে। আর এখানে কিছু প্রবলেমও আছে।
অন্যদিকে ক্লাস শুরু হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে পরীক্ষা নেবে না বলে জানিয়েছেন আখতারুজ্জামান। তবে অন্যান্য স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষা নেয়া হবে কি না- এই বিষয়ে তারা এখনো কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে আখতারুজ্জামান বলেন, ক্লাস শুরু হলেও অনলাইনে পরীক্ষা নেয়া হবে না। বিশ্ববিদ্যালয় খুললে তখন পর্যাপ্ত রিভিউ ক্লাস নিয়ে ঘাটতি পূরণ করার চেষ্টা হবে। তবে এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্য আইটি অবকাঠামো, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ, শিক্ষার্থীদের সহায়তার জন্য সরকারের অর্থ সাহায্য লাগবে।
গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, করোনা সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকতে পারে। তবে সর্বশেষ করোনা সংক্রমণ বিবেচনায় দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আগামী ৬ আগস্ট পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার।