একক নাটক: সিগনেচার
রচনা ও পরিচালনা: আওরঙ্গজেব
অভিনয়: আফরান নিশো, মেহজাবীন চৌধুরী।
প্রতিবারের মতো এবারের ঈদেও সরকারি, বেসরকারি ও অনলাইন সম্প্রচার মাধ্যমগুলো সাজানো হয়েছে বিভিন্ন আঙ্গিক ও ঘরোনার নাটক ও টেলিফিল্ম দিয়ে। কিন্তু বৈশ্বিক তথা বংলাদেশের পরিস্থিতি এবার পক্ষে না থাকায় এবার সম্প্রচার মাধ্যমগুলোতে নতুন নাটকের সংখ্যা তুলনমূলক কম। নাটকের সংখ্যা কম হলেও ভালো নাটকের সংখ্যা কম সেটা বলা যাচ্ছে না। অন্যান্য বছরের মতো এবারও প্রচারের পরই আলোচনাই উঠে আসছে কয়েকটি নাটক। আলোচিত নাটকগুলোর মধ্যে অন্যতম আফরান নিশো ও মেহজাবীন চৌধুরী অভিনীত আওরঙ্গজেবের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় ‘সিগেনেচার’ নাটকটি। এটি আরটিভিতে ঈদের দ্বিতীয় দিন রাত ১১ টা ৩৫ মিনিটে প্রচার হয়।
জীবনের থেকে বড় কোনও রিহ্যাব নেই- এমনই এক জীবনবোধের উপর গড়ে উঠেছে সিগনেচার নাটকের গল্পটি। গল্পে আফরান নিশোকে সুপার স্টার রিজভী আহমেদ চরিত্রে দেখা যায়। রিজভী আহমেদ নিজেকে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন সময়ের সব থেকে সুপার স্টার। আর সেই জায়গা থেকেই সে তার ক্যারিয়োরের প্রতি তীব্র সচেতন। সে কোনোভাবেই নিজের অবস্থান হারাতে চায় না। আর এই তীব্র সর্তকতা তাকে মানুষ ও মানবিক বোধ থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে কিছু সময়ের জন্য।
ফলে শহরের রাস্তায় এক অজ্ঞাত যুবতীর (মেহজাবীন ) লাশ এমনকি খুনিদের দেখার পরও রিজভী আহমেদ খুব সুকৌশলে পাশ কাটিয়ে যেতে চায়। কিন্তু মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে তার মধ্যে মানবিক বোধ থাকবে না সেটা কি করে হয়? সেই জায়গা থেকেই খুন হওয়া যুবতী বিভিন্ন চরিত্রে কখনও ফুচকাওলা, কখনও ভিক্ষুক, কখনও স্বপ্নে, কখনও তার কোনও গল্পের নায়িকার অপসারণ আবার কখনও ফ্যান হয়ে অটোগ্রাফ চাওয়ার মধ্য দিয়ে রিজভী আহমেদের অপরাধ বোধকে নাড়া দিয়ে যায়। যে কারণেই গল্পের একটা জায়গায় রিজভী আহমেদকে বলতে দেখা যায় , এমনও কি হয়? স্বপ্ন বাস্তবতার থেকে ক্রুটিমুক্ত ও চুড়ান্ত। এতোটা গভীরভাবে জীবনকে উপলদ্ধি করা সহজ নয়। তীব্র অপরাধবোধ ও মানবিক সংকটে ভুগতে থাকা রিজভী আহমেদের সঙ্গে নিজেরই বেডরুমে খুন হতে দেখা মেয়াটার সঙ্গে যে কথার আদান প্রদান হয় তা জীবনকে অন্যভাবে সংজ্ঞায়িত করে।
রেললাইনটা কোথাও আকাশের মধ্যে ঢুকে যায়নি, শেষটাও কিন্তু সামান্তরাল – মেহজাবীনের এই সংলাপটি র্দশককের সামনে যেমন চিরচারিত সত্যকে তুলে ধরে তেমনি তারকাখ্যাতি পাওয়া একজন মানুষ শুধু সেলিব্রেটি তকমা নিয়ে বিলাসবহুল জীবন যাপন করা পর্যন্তই তার সীমাবদ্ধতা নয় সেটাও সে বুঝিয়ে দিয়েছে পরের সাংলাপটি দিয়ে- তোর এই তারকাখ্যাতি, স্টারডাম সব কিছু ছাপিয়ে তোর মধ্যে একটা মানবিক সত্ত্বা আছে, যেকারণেই তোকে আজ এই অবস্থায় দাঁড়াতে হয়। একজন সেলিব্রেটির সামাজিক দায়বদ্ধতা থাকা প্রয়োজন আর দশজনের তুলনায় বেশি এই সত্যকে মেনে নিয়ে আফরান নিশোর নন এক্সিসটেবল চরিত্র মেহজাবীনের কাছে নুইয়ে পড়া আপনাকে গভীরভাবে ভাবাবে। দুজনের আত্মবিশ্বাসী ও অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পারর্ফমেন্স এবং তাৎর্পযপূর্ণ সংলাপের কারণে নাটক শেষ হওয়ার পরও শেষ দৃশ্যটা চোখে ভাসতে থাকে। সব কিছু ছাপিয়ে নাটকের শেষের ওভার ভয়েস – কোনও দায়বদ্ধতা এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ জীবন জীবনকে দেয় না। জীবনের থেকে বড় কোনও রিহ্যাব নেই, জীবনই জীবনকে করে তোলে মৌলিক ও লৌকিক সুন্দর। এই সংলাপগুলো কানে বাজতে বাজতে থাকে অনেকটা সময়।
অনেকের মতে নাটকটি মেহজাবীনের ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা কাজ। পাশাপাশি বিভিন্ন অনলাইন গ্রুপে অলোচনা ও রিভিউ এ দেখা গেছে নিশো ও আওরঙ্গজেব জুটি ভিন্নধর্মী ও গভীরভাবে ভাবাতে পারে আরও এমন কাজ দিতে পারে এবং একটা শ্রেণী আশাবাদী। আওরঙ্গজেব নির্মাতাহিসোবে খুব বেশি সময় পার করেছে বলে মনে হয় না। তবে তার সিগনেচার নাটকের গল্প ও নির্মানের ভেতর দিয়ে যথেষ্ট শক্তপক্তো ও র্দীঘসময় অবস্থানের জানান দিয়েছে বলেই মনে হচ্ছে।
কিছু কিছু ব্যাপারে নির্মাতা আর একটু যত্নশীল হলে হয়তো ব্যাপারটা আরও সুন্দর হয়ে উঠতে পারতো। যেমন পার্শ্বচরিত্রে ডাক্তর ও প্রোডিউসার ছাড়া বাকি চরিত্রগুলো আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা সম্ভব ছিল। সেটের ক্ষেত্রে আরও মনোযোগ দেওয়ার সুযোগ ছিল। এসব বাদ দিলে এডিটিং ও ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক অসাধারণ ছিল। তবে গতানুগতিক ধারার বাইরে এসে নতুন কিছু করার চেষ্টা সহজ নয়। সেই জায়গা থেকে পরিচালকের এমন একটি গল্পে নাটক নির্মাণ প্রশংসার দাবি রাখে। কারণ যুগে যুগে ভালো গল্প, অভিনয় ও নির্মাণের কাজই মানুষ মনে রাখেন।