মরতে একদিন হবেই এতে ভয় পাই না: প্রধানমন্ত্রী

ধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘করোনাভাইরাসে মরি, গুলি খেয়ে মরি, অসুস্থ হয়ে মরি, মরতে একদিন হবেই। আমি ভয় পাইনি। কখনো ভয় পাবো না।’ 

মৃত্যু যখন অবধারিত তখন সেটাতে ভয় পাওয়ার কিছু নাই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি । 

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারের হত্যার পর তিনি দেশে ফেরার সময়কালকে উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি যখন বাংলাদেশে ফিরে আসি, সেটা ছিল সেই বাংলাদেশ, যেখানে আমার বাবা, ভাই, বোন, শিশু ভাইটিকে পর্যন্ত হত্যা করা হয়েছিল। আমাদের পরিবারের বহুজনের সদস্য বুলেটবিদ্ধ, আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী বুলেটবিদ্ধ বা স্প্লিন্টার নিয়ে বেঁচে আছেন।’

বুধবার জাতীয় সংসদে এক শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সব বলেন। 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের কারণে সবারই কাজ করার সুযোগ ছিল না। যারা নিয়মিত চাকরির বেতন পেতেন তার বাইরে কিছু লোক থাকেন, যারা ছোটখাট কাজ করে খান, ব্যবসা করে খান, এমন প্রতিটি মানুষের খবর নিয়ে নিয়ে তাদের ঘরে ঘরে খাবার দেয়ার ব্যবস্থা করি। এমনকি রিকশার পেছনে যারা আর্ট করে, সাংস্কৃতিককর্মী, তাদেরকে কিছু সরকারিভাবে, কিছু আমাদের ত্রাণ তহবিল থেকে সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। আর্টিস্ট বা শিল্পী কিংবা শিল্পীদের সহযোগিতা করে যারা, তাদের কথা কেউ ভাবে না। এই ভাবনাটা কিন্তু আমার নিজের না, সত্যিকারের কথা বলতে কি- এটা শেখ রেহানার চিন্তা। সে-ই কিন্তু খুঁজে খুঁজে তাদের সাহায্য দেয়ার ব্যবস্থা করেছে।’

প্রত্যেক জেলা প্রশাসকের কাছে আলাদাভাবে ত্রাণ দিয়ে রেখেছি যাতে তারা সাহায্য করতে পারেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দলের নেতাকর্মী যে যেখানে আছে, যে যেটুকু পেরেছে প্রত্যেকেই সাহায্য করেছে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষও সাহায্য করেছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘করোনার কারণে কেউ মারা গেলে আত্মীয়-স্বজন লাশ ফেলে চলে যায়। সেই লাশটা টানে পুলিশ বাহিনী। তারা নিয়ে কবর দিচ্ছে, জানাজা দিচ্ছে। ভয়ে আপনজন কেউ থাকছে না। মানুষ ভীত হয়ে এরকম অমানবিক আচরণ করবে এটাও কিন্তু দুঃখজনক। আরেকটি বিষয় আমি না বলে পারব না, যেমন আমাদের ছাত্রলীগ আমার নির্দেশে ধান কেটেছে। এমনকি এই লাশ নিয়ে এসে তাদের দাফনের ব্যবস্থা, যারা অসুস্থ তাদের হাসপাতালে পৌঁছে দেয়া, সেবা-শুশ্রুষা করার কাজগুলো কিন্তু ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগ করে যাচ্ছে।’

মহান আল্লাহ জীবন দিয়েছেন একদিন তিনি তা নিয়ে যাবেন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ মানুষকে কিছু কাজ দেন। সেই কাজটুকু যতক্ষণ পর্যন্ত শেষ না হবে ততক্ষণ হয়তো আমি কাজ করে যাব। যখন কাজ শেষ হয়ে যাবে, সময় শেষ হবে, তখন আমি চলে যাব। তাই এই নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’

করোনা মহামারির এ সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ বাজেট দিতে পারে নাই। বাংলাদেশ করোনা মোকাবেলা করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা দেশের মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করবো। তারা যেন কষ্ট না পায় সেজন্য যা যা করণীয় করে যাবো। আমি তো এখানে বেঁচে থাকার জন্য আসিনি। আমি তো জীবনটা বাংলার মানুষের জন্য বিলিয়ে দিতে এসেছি, এটাতে তো ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভয়ের কী আছে!’

এর আগে বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাস (কভিড-১৯) সংক্রমণে বাংলাদেশসহ বিশ্বের দেশে দেশে ব্যাপক প্রাণহানি ও ঢাকা-৫ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা হাবিবুর রহমান মোল্লার মৃত্যুতে আজ সংসদে সর্বসম্মতভাবে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এই শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন।

একাদশ জাতীয় সংসদের সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লা গত ৬ জুন সকাল নয়টা পঞ্চাশ মিনিটে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

এছাড়া, আটজন সাবেক সংসদ-সদস্য ও একজন সাবেক গণপরিষদ সদস্যের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রকাশ করা হয়। মৃত্যুবরণকারী সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ালিউর রহমান রেজা, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক খন্দকার আসাদুজ্জামান, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মমতাজ বেগম, আলহাজ্ব মকবুল হোসেন, জহিরুল ইসলাম, কামরুন নাহার পুতুল, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আনোয়ারুল কবির তালুকদার, এম এ মতিন ও সৈয়দ রাহমাতুর রব ইরতিজা আহসান।

এছাড়া, এমিরেটাস অধ্যাপক ও উপমহাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. আনিসুজ্জামান, ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়ার সহধর্মিণী আনোয়ারা রাব্বী, পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক ও সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ এমপির সহধর্মিণী বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহান আরা বেগম, অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের পুত্রবধূ, সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এ কে ফাইজুল হকের স্ত্রী মোসাম্মৎ মরিয়ম বেগম, রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এমপির বড় ভাই এবিএম ফজলে রাব্বি চৌধুরী, সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকারের পিতা সুশান্ত সরকার, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব ও সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ড. সাদাত হুসাইন, জাতীয় অধ্যাপক ও খ্যাতিমান প্রকৌশলী জামিলুর রেজা চৌধুরী, স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ও ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সানবিমস স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ নিলুফার মঞ্জুর, একুশে পদক প্রাপ্ত রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক ড. মজিবর রহমান, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট আলেম কাজী মুহাম্মদ নুরুল ইসলাম হাশেমী, সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের পরিচালক গোলাম রাব্বানী হেলাল, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রাপ্ত সুরকার, সংগীত পরিচালক এবং কণ্ঠশিল্পী আজাদ রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী আব্দুল মোনেম লি. এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল মোনেম এবং বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রথম নারী ক্যামেরাম্যান রোজিনা আক্তারের মৃত্যুতে সংসদ গভীর শোক প্রকাশ করেছে।

এছাড়া, প্রাণঘাতী করোনায় আক্রান্ত হয়ে দেশে-বিদেশে যে সকল ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, প্রশাসন, পুলিশের সদস্য, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, গণমাধ্যমকর্মী, ব্যবসায়ী ও সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং অন্যান্য সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদের মৃত্যুতে সংসদ থেকে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তা-বে বাংলাদেশ ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গসহ বিভিন্ন স্থানে নিহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদ গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছে।

এছাড়া, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে করোনা আক্রান্ত ও দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ করে। এসময় সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করা হয়।

এর আগে শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনায় অংশ নেন সরকারি দলের বেগম মতিয়া চৌধুরী, আ স ম ফিরোজ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, জাসদের হাসানুল হক ইনু ও বিরোধী দলীয় চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ।

শোক প্রস্তাবের উপর আলোচনা শেষে মৃত্যুবরণকারীদের আত্মার মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। এর আগে তাদের স্মরনে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।